জানুয়ারির কোনো এক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাগরের হাওয়া লাগাতে আলকিমস শোর হ্যাভেন এ গেলাম। গিয়ে দেখি মানুষজন, গান বাজনা, অস্থায়ী খাবারের দোকানে বেশ জমজমাট। পরিবেশটা একেবারেই অন্যরকম ছিল। সাগর পারে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে বেঞ্চে বসে সিঙ্গারা খাওয়ার মজাই অন্যরকম। সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। জানতে পারলাম এই মৌসুমে এরকম আয়োজন মাসে দুই বৃহস্পতিবারে থাকবে। খুব বেশি দূরে নয় আমাদের বাসা থেকে এই সমুদ্র সৈকত। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে এই নতুন সৈকতটি। অনেকদিন আগে বড় মেয়ে একবার নিয়ে গিয়েছিলো ওখানকার একটা ক্যাফেতে। তারপর আর যাওয়া হয়নাই ওদিকে।
হেনা এবং আমি ওই সৈকতের প্রতি টান অনুভব করলাম। এক ছুটির দিনে চলে গেলাম আবারো আমাদের কেনা ছোট্ট একটা তাবু নিয়ে, ইচ্ছে হলো তাবু টানিয়ে একটু চা খাবো আর বই পড়বো সাগর পারে। কথামতো কাজ, হয়তো দু-তিন ঘন্টা কাটিয়ে দিয়েছি তাবুতে। তারপর তাবু থেকে বের হলাম সাগরে একটু নামার উদ্দ্যেশে। সেদিন বেশ গরম ছিল, তাই অনেকটা প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলাম পানিতে নামার। তাবু থেকে বেরিয়ে দেখি অন্য জগৎ, কিছুই টের পাইনাই এতক্ষন। দেখি বাইরে বেশ কিছু লোকজন ভিড় করে আছে আমাদের তাবু থেকে কিছুটা দূরত্বে। কিছুক্ষনের মদ্ধেই টের পেলাম সেখানে সর্প রাজ্যের কোনো এক নাগিন পথ হারিয়ে বেতাল। তাকে ঘিরে এত লোকজন কেন যে ছিল তার কারণ ঠিক বুঝতে পারিনি। বেচারার নিশ্চয়ই বেগতিক লাগছিলো, তাই কেবল এদিক ওদিক করছিলো। আমরা তাবু গুটিয়ে ফেললাম আর পানিতে না নামার সিদ্ধান্ত নিলাম। হেনাও কাছে গিয়ে স্মৃতি স্বরূপ ছবি এবং ভিডিও রেকর্ড করে রাখলো, যদিও ব্যাপারটা আমার পছন্দ হয়নাই। আমার ধারণা এরা শান্তিপ্রিয় প্রাণী, এদেরকে বিরক্ত না করাই ভালো।
সৈকতটি নতুন তাই হয়তো এই প্রাণীরা বুঝতে পারেনাই এখনো যে এ জায়গা মানুষেরা দখলে নিয়ে ফেলেছে। হেনা আমাকে বলতে থাকল, “একারণেই আমি তাবু কিংবা মাটিতে বসতে পছন্দ করিনা”। একথা ঠিক অস্ট্রেলিয়াতে অনেক সাপ এবং বিভিন্ন ধরণের পোকা-মাকড় আছে এবং তাদের মাঝে অনেক গুলোই বেশ বিষাক্ত। কিন্তু তাই বলে কি খোলা আকাশের নিচে আরাম করে একটু বসবো না? বেশ জোর করেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর একটা ছোট্ট তাবু আর একটা চড়ুইভাতি মাদুর কিনেছিলাম। কিন্তু কপাল, মনে হয়না এর ব্যবহার আর হবে। আমার মেয়ে জানতে চাইলো আমি কি ঐদিন চিৎকার করেছি কিনা, সত্যি বলতে কি আমি কিন্তু খুব স্বাভাবিক ছিলাম। আর তাকে(নাগিন) ওই প্রকৃতির সঙ্গে বেশ ভালোই লাগছিলো দেখতে, ছবি এবং ভিডিওতে সেই সৌন্দর্য ধরা যায়নি। খোলা আকাশ, রোদেলা দুপুর, উঁচুনিচু ল্যান্ডস্ক্যাপে সবুজ ঘাস এবং বুনো লতায় জায়গাটি মনকে অনেক বড় একটা জায়গা করে দেয় প্রশান্তি নেওয়ার জন্য।
হয়তো আমরা সেদিন বেশ বিষাক্ত একটা সাপ দেখেছিলাম। কিন্তু তাতে কি, এত সুন্দর প্রকৃতিতে তারাও নাহয় তাদের একটা জায়গা নিয়ে থাকবে। আমরা আমাদের মতো থাকবো। এত সুন্দর দেশটাতে প্রতি বছর বনে আগুন লেগে মাইল এর পর মাইল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেখানে আবার সবুজ পাতা গজায়, আমরা এই ভূখণ্ডে মহামারীতেও আক্রান্ত। এসবকিছু নিয়েই আমাদের সুন্দর জীবন

January ’21
@Alkimos Shore Heaven, WA.