[১] ২১ জানুয়ারি আমার ৬২ তম জন্মদিন অর্থাৎ ৬১ তম জন্মবার্ষিকী। এই করোনাকালে কোভিডমুক্ত সুস্থ জীবনই এ পর্যন্ত আমাদের সুসংবাদ। পরম করুণাময়ের কাছে এজন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।
[২] জন্মদিন উপলক্ষ্য করে আমি আপনাদের নিকট দোয়া প্রত্যাশা করছি। আপনাদের শুভেচ্ছা ঝন্ঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সংবাদপত্র সহ পথ চলায় আমাকে সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগাবে।
[৩] আমার ৬১ বছরের জীবনে ৪২ বছর কেটেছে সম্পাদক হিসেবে এবং সাংবাদিকতার বহুমুখী কাজে। চেষ্টা করেছি ব্যাপক পাঠকের আস্থা ও সময়োপোযোগী চাহিদা পূরণে কর্ম উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে।
[৪] এখন আমাদের সংবাদপত্র গুলো নিয়ে আমি দুর্নীতি, অনিয়ম ও বাধা-বিঘ্নের সমুদ্রে অনেক কষ্টে সাতরাচ্ছি, কূলে পৌঁছাতে পারছি না।
[৫] এই মহাসমুদ্রে আরও আছে অবিচার এবং কিছু মানুষের উপেক্ষা এমনকি উপহাসও। এক দিকে সীমিত আর্থিক সামর্থ্য অথচ অসাধ্য সাধনের সাধ। অন্যদিকে আগ্রাসী প্রতিদ্বন্দিতার পংকিল পরিবেশ।
[৬] এমন বৈরি সাগরে কখনো কখনো মানুষের কৃতঘ্নতা, অকৃতজ্ঞতা, এমনকি বন্ধুরও অবহেলা এবং অন্যায় সামাল দিতে হচ্ছে। সামাল দিতে হচ্ছে নীতিনিয়ম, আইন-কানুনের শাসন ও শুদ্ধাচারের অভাব অথবা অনুপস্থিতি।
[৭] সহকর্মীদের অনেকের নিছক খামখেয়ালি কিংবা উদাসীনতায় এই সংকটের সাগর পাড়ি দেওয়া আরও দুরূহ হয়ে উঠছে। আমি বুঝাতে পারছি না সংবাদপত্রের সাফল্যের মূলে থাকে মিলিত মেধা ও শ্রম, কোনো একজনের ম্যাজিক নয়।
[৮] অভূতপূর্ব এই বৈরি সময়ে কারো কারো সহযোগিতা ও সমর্থনের কার্পণ্যে সামগ্রিক সংবাদপত্র পরিচালনায় নীতি ও কৌশল নির্মাণ দুরূহ থেকে দুরূহতর হয়ে পড়ছে।
[৯] চিন্তা-ভাবনার জন্য শান্ত ও সুস্থির সময়ও এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। এসব কাউকে কাউকে বুঝাতেও ব্যর্থ হচ্ছি। ভাবনা, চিন্তা ও কৌশল নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণে যে কোথাও কোনো শান্তির দ্বীপে একটু জিড়ানোর অবসর দাবি করে, তাও পাচ্ছি না।
[১০] লড়াই সংগ্রামের এই রক্তাক্ত সাগরে ক্ষত বিক্ষত আমি যেন লক্ষ্যের কিনারা শীঘ্রই দেখতে পাই, জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার জন্য সকলের নিকট শুভেচ্ছা ও সমর্থন প্রার্থনা করি।
[১১] আমাদের সংবাদপত্র গুলো মনের মতো করে, আমার পরিকল্পনা মতো বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করতে পারছি না। সেজন্য আমি বিব্রত ও লজ্জিত। নিজে নিজে কুঁচকে থাকি। এরকম একটা মানসিক অতৃপ্তি, অশান্তি ও অস্থিরতার সময়ে আমার জন্মদিনটা সকলকে নিয়ে উদযাপনের, উৎসাহ বা সাহস, কোনোটাই পাচ্ছি না। এজন্য অন্তত আরও একটি বছর আনন্দ করতে চাই না। এক বছর পর যদি উদ্দীষ্ট কূল কিনারা না পাই, আশা করি চলার অনিঃশেষ পথে একটি দ্বীপে অন্তত পৌঁছাতে পারবো। তখনই না হয় হবে একটি আনন্দ উদযাপন।
[১২] পরিবার সবসময় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তিন কন্যা, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে আমার ছোট্ট সংসার। সংসারও আমার আশ্রয়। এই সংসার এখনও ভাড়াটে, ভাসমান ও অনিশ্চিত।
[১৩] হাজারো প্রতিকূলতার রক্তাক্ত সাগরের (red ocean) গভীরে আছে বিপুল নীল জলরাশি। সেখানে ডুব দিয়ে দিয়ে, নবিশ ডুবুরি আমি অনেক মহৎ মানুষের সাহায্য সমর্থন কুড়িয়ে তবুও পথ চলছি। এই অসাধারণ মানুষগুলোর প্রতি জন্মদিন উপলক্ষ্যে অশেষ কৃতজ্ঞতা।
অনুলেখক: ফাহমিদা তিশা
রচনার তারিখ: ১৯ জানুয়ারি ২০২১
Nayeemul Islam Khanএর পোষ্ট থেকে