ডেঙ্গু , চিকুনগুনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে চলতি বছরে চতুর্থ দফায় বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম তথা চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। সোমবার (২ নভেম্বর) শুরু হওয়া ১০ দিনব্যাপী এই অভিযান চলবে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত।
সিটি কর্পোরেশনের ১০টি জোনের ৫৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত একটানা এই অভিযান পরিচালিত হবে বলে ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়। তবে শুক্রবার অভিযান বন্ধ থাকবে। বরাবরের মতোই প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সেক্টরে এবং প্রতিটি সেক্টরকে ১০টি সাব সেক্টরে ভাগ করে অভিযান পরিচালিত হবে।
প্রতিটি সাবসেক্টরে ডিএনসিসির ৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১ জন মশক নিধনকর্মী, অর্থাৎ প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০ জন মশককর্মী ডিএনসিসির আওতাধীন বিভিন্ন বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কোথাও এডিস মশার লার্ভা আছে কিনা, কিংবা কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমে আছে কিনা, কিংবা ময়লা-আবর্জনা আছে কিনা, যা এডিস মশার বংশবিস্তারে সহায়ক, তা পরীক্ষা করবেন। চিরুনি অভিযান চলাকালে ডিএনসিসির ৩ জন কীটতত্ববিদ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা দিক-নির্দেশনা দেবেন।
সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চিরুনি অভিযানে পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পরিচালনা করা হবে।
এ বিষয়ে সংস্থাটির অতিরিক্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তফা সারওয়ার বলেন, পরিচ্ছন্নতা এবং মশক নিধনের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। বিগত দিনে পরিচালিত চিরুনি অভিযানে যেসব বাড়ি বা স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছিলো তার তালিকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অ্যাপসে সংরক্ষিত আছে। এবার সেই তালিকা ধরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং কারো বাড়ির আশেপাশে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চিরুনি অভিযান সর্বাত্মকভাবে সফল করতে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, গণমাধ্যমকর্মীরা এবং ডিএনসিসির সর্বস্তরের জনগণকে আহ্বান জানান।
ডিএনসিসির সব ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদেরকে অভিযানের সময় মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এক ভার্চ্যুয়াল সভায় সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে আতিকুল ইসলাম বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যেকোনো মূল্যে সম্মিলিতভাবে অবশ্যই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে। সবাইকে নিয়েই আমাদের এই কাজটি করতে হবে।
সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা আতিক নগরবাসীদের উদ্দেশ্যে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অসময়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ তাপমাত্রার জন্য হঠাৎ করে নগরে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যদিও উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রোগীর সংখ্যা অল্প তথাপি আমরা এই সমস্যাটাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার ডেঙ্গু রোগীদের ঠিকানা সংগ্রহ করে সেই বাড়ির ৪০০ গজ ব্যাসার্ধে র্যাপিড অ্যাকশন টিমের মাধ্যমে স্পেশাল পরিচ্ছন্ন এবং মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করেছি। যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আছে সেসব হাসপাতালের চারপাশে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা এবং মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার ডেঙ্গু রোগীদের তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত আছে।
এবারের অভিযানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর বাসা এবং ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় এমন হাসপাতাল এলাকাগুলোতে বিশেষ নজর থাকবে বলে অভিযান এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
প্রসঙ্গত, এর আগে চলতি বছরে ১৬-২৪ মে, ৬-১৪ জুন এবং ৮-২০ আগস্ট তিন দফায় এমন অভিযান পরিচালনা করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।