জাম্বুরা অতি পরিচিত একটি ফল। জাম্বুরাকে অনেক নামেই ডাকা হয়। বাতাবি লেবু, বাদামি লেবু, ছোলম, বড় লেবু ইত্যাদি। যা সব মৌসুমে পাওয়া যায় না। মৌসুমি এই ফলটি অনেকেরই পছন্দের তালিকায় রয়েছে। স্বাদ টক-মিষ্টি হওয়ায় খেতেও দারুণ লাগে জাম্বুরা। জাম্বুরা হচ্ছে উপকারি আর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল।
জাম্বুরা বা বাতাবি লেবু বা তুরুনজা এক প্রকার লেবু জাতীয় টক-মিষ্টি ফল। এর ইংরেজি নাম Pomelo (pummelo বা pommelo) এবং বৈজ্ঞানিক নাম Citrus maxima (সাইট্রাস ম্যাক্সিমা) বা Citrus grandis (সাইট্রাস গ্র্যান্ডিস) । বিভিন্ন ভাষায় এটি পমেলো, জাবং, শ্যাডক ইত্যাদি নামে পরিচিত। কাঁচা ফলের বাইরের দিকটা সবুজ এবং পাকলে হালকা সবুজ বা হলুদ রঙের হয়। এর ভেতরের কোয়াগুলো সাদা বা গোলাপী রঙের।
পুষ্টিগুণ : প্রতি ১০০ গ্রাম বাতাবি লেবুর মধ্যে ক্যালোরি আছে ৩৭ কিলো ক্যালোরি, শর্করা ৯.২ গ্রাম, মুক্ত চিনি থাকে ৭ গ্রাম, সামান্য খাদ্যআঁশ, প্রোটিন ও ফ্যাট বর্তমান। বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণ ১২০ মা.গ্রা., ভিটামিন ৬০ গ্রাম, ভিটামিন ‘বি’ও থাকে। ক্যালরি কম থাকায় ডায়াবেটিস ও স্থুলকায়দের জন্য খুবই উপকারী ফল।
জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ :
ক্যান্সার প্রতিরোধ – জাম্বুরা আন্ত্রিক, অগ্ন্যাশয় ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। এর লিমোনয়েড নামক উপকরণ ক্যানসারের জীবাণুকে ধ্বংস করে ও এর আঁশ মলাশয়ের ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
ওজন হ্রাস – জাম্বুরাকে রয়েছে প্রচুর আঁশ। এটি দেহের অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত জাম্বুরা গ্রহণে শরীরের ওজন কমে।
বয়সের ছাপ দূর করে – নিয়ম করে প্রতিদিন এক গ্লাস জাম্বুরার জুস খেলে স্কিন এবং চুলের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।জাম্বুরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে।ফলে,বয়সের ছাপ দূর হয়।এছাড়া,জাম্বুরাতে রয়েছে চুল থাকে সুস্থ এবং সুন্দর।
রোগ প্রতিরোধ – জাম্বুরাতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। এটি রক্তনালীর সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ডায়াবেটিস, জ্বর, নিদ্রাহীনতা, পাকস্থলী ও অগ্ন্যাশয়ের বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
রক্তচলাচল বৃদ্ধি – জাম্বুরাতে প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছে। এটি আমাদের ধমনির আয়তন বৃদ্ধি করে রক্ত চলাচলের পথকে সুগম করে। ফলে দেহের বিভিন্ন প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছানো সহজ হয়, যা হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ কমায় এবং স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের আশঙ্কা হ্রাস করে।
হজম সমস্যায় – জাম্বুরাতে রয়েছে প্রচুর আঁশ। এটি খাদ্যের সঠিক পরিপাকে সাহায্য করে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দূর করে। এর আঁশ পরিপাকতন্ত্রের ক্রিয়া সচল রাখে ও সঠিক মাত্রায় পরিপাক রস নিঃসৃত করে। ফলে খাদ্যের সর্বোচ্চ পরিপাক হয় এবং হজমের সমস্যা দূর করে।
মজবুত হাড় – আমাদের দেহে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়ামের অভাব হলে অস্টিওপোরোসিসসহ হাড়ের নানাবিধ রোগ দেখা দেয়। জাম্বুরাতে এই খনিজ উপাদানসমূহ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।
এল ডি এল কমাতে সাহায্য করে – যাদের দেহে এল ডি এল বা ব্যাড কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি তাদের জন্য জাম্বুরা ভীষণ উপকারী। জাম্বুরাতে থাকা ফাইবার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।এছাড়া,এই ফাইবার ওজন কমাতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও সমান উপকারি।
পেশীর টান লাগা দূর করে – পানি পানের অভাব,ডিহাইড্রেশন এবং ইলেক্ট্রলাইটস ইম্ব্যালেন্সের কারণে আমাদের মাসেল ক্রাম্প হয়।আর,যাদের প্রায় মাসেল ক্রাম্প অর্থাৎ পেশীতে টান লাগে,তারা নিয়মিত জাম্বুরা বা জাম্বুরার রস খেতে পারেন।জাম্বুরা বেশ ভাল পরিমাণে ইলেক্ট্রলাইটস এবং তরল সরবরাহ করতে পারে।