পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ পেয়ারার রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। বাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে মৌসুমি ফল পেয়ারা।সবুজ এ ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণেও অতুলনীয়। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ‘সি’ ও লাইকোপেনসমৃদ্ধ পেয়ারা।
পেয়ারা(বৈজ্ঞানিক নাম:Psidium guajava), এরা Myrteae পরিবারের সদস্য। একরকমের সবুজ রঙের বেরী জাতীয় ফল । তবে অন্যান্য বর্ণের পেয়ারাও দেখতে পাওয়া যায়। লাল পেয়ারাকে (Marroonguava) রেড আপেলও বলা হয়। পেয়ারার বৈজ্ঞানিক নাম Psidiun guajava । পেয়ারার প্রায় ১০০টিরও বেশি প্রজাতি আছে। মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রভৃতি স্থানে পেয়ারা বেশি জন্মে। অনুমান করা হয় ১৭শ শতাব্দীতে পেয়ারা আসে। এটি একটি পুষ্টিকর ফল। এটি ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েডস, ফোলেট, পটাশিয়াম, আঁশ এবং ক্যালসিয়াম প্রভৃতিতে সমৃদ্ধ। একশ’ গ্রাম পেয়ারায় দুইশ’ মি.গ্রা. ভিটামনি সি আছে অর্থাৎ পেয়ারায় কমলার চেয়ে ৪গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে।
পুষ্টিমান:
পুষ্টিমানের বিবেচনায় পেয়ারার পুষ্টি মূল্যমান ৪২১ পয়েন্ট। পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধক। ১০০ গ্রাম পেয়ারায় পানি ৮৬.১০ গ্রাম, শক্তি ৫১ কি.ক্যালোরী, প্রোটিন ০.৮২ গ্রাম, আঁশ ৫.৪ গ্রা. ফসফরাস ২৫ মি.গ্রা. সোডিয়াম ৩ মি.গ্রা. ভিটামিন এ ৭৯২ আই ইউ থাকে। তদুপরি পেয়ারাতে ম্যাঙ্গানিজ, সেলিনিয়াম, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩ ইত্যাদি মূল্যবান খনিজ ও ভিটামিন থাকে। রোগ প্রতিরোধে পেয়ারার অনেক গুণ রয়েছে। পেয়ারার বীজে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ পলিআন-সেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ও আঁশ বিদ্যমান। পেয়ারা পাতার রস ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং সংক্রমণ, প্রদাহ, ব্যথা জ্বর, বহুমূত্র, আমাশয় প্রভৃতি রোগে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
পেয়ারার উপকারিতা:
১. পেয়ারায় যে আঁশ আছে, তা শরীরে চিনি শোষণ কমাতে পারে। তাই নিয়মিত পেয়ারা খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে।
২. পেয়ারায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’, যা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করে।
৩. পেয়ারায় থাকা ভিটামিন ‘এ’ চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় ও রাতকানা রোগ থেকে বাঁচায়।
৪. ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে পারে এই ফল। পেয়ারা খেলে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা কমে। এ ছাড়া এই ফলের রয়েছে ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা।
৫. ক্যান্সার প্রতিরোধেও পেয়ারা খুব ভালো কাজ করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লাইকোপেন, ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারে এই ফল। প্রোস্টেট ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের জন্য পেয়ারা খুবই উপকারী।
৬. পেয়ারা রক্তসঞ্চালন ঠিক রাখে এবং কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পেয়ারা খেতে পারেন৷
৭. পেয়ারা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এই ফলের রস সর্দি-কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয়সহ পেটের অসুখ সারাতে খুব ভালো কাজ করে।
৮.উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেয়ারা বেশ উপকারী।
৯.পেয়ারায় ইনফেকশনরোধী উপাদান থাকায় হজমক্রিয়া শক্তিশালী করে।
১০. ত্বক, চুল ও চোখের পুষ্টি জোগায় পেয়ারা।
১১. পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ময়েশ্চার যা তারুণ্য বজায় রাখে র্দীঘদিন। ত্বকের রুক্ষ ভাব দূর করে ও শীতে পা ফাটা রোধ করে।
একটি পেয়ারায় রয়েছে ৪টি কমলালেবুর সমান পুষ্টিগুণ। তাই সপ্তাহে অন্তত একটি করে হলেও আমাদের পেয়ারা খাওয়া উচিত।