শিল্পাঞ্চলের ৭ হাজার ৬০০ কারখানার দুই-তৃতীয়াংশ কারখানা এখনো এপ্রিল মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। পরবর্তী মাসের সাত কার্যদিবসের মধ্যে বেতন পরিশোধের আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও শিল্পাঞ্চলের ৫ হাজার ৫০টি কারখানা গতকাল পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। বাদবাকি ২ হাজার ৫৫২টি কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে।
শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত কারখানার প্রায় অর্ধেক রপ্তানিমুখী। রপ্তানিমুখী কারখানার বেতন পরিশোধে সরকার প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। তা সত্ত্বেও এসব শিল্পের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কারখানায় এখনো বেতন পরিশোধ হয়নি। এছাড়া এখনো তিন শতাধিক কারখানা মার্চের বেতনও পরিশোধ করেনি বলে শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে বেতনভাতা ইস্যুতে শিল্পাঞ্চলে অসন্তোষও থামছে না। গতকাল শনিবারও গাজীপুর, আশুলিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় শতভাগ বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ, ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। উদূ্ভত পরিস্থিতিতে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, অপেক্ষাকৃত ছোটো কারখানাগুলোর পক্ষে সরকারের প্রণোদনার আওতায় ঋণ পাওয়া সম্ভব হবে না। এসব কারখানা ঋণ না পেলে বেতন পরিশোধেও সমস্যা হতে পারে। এছাড়া এখনো মার্চের বেতন পরিশোধ না হওয়া কারখানার সংখ্যাও অনেক। এ ধরনের বেশকিছু কারখানার তালিকা তুলে ধরে ঈদের আগে এসব কারখানার বিষয়ে বিশেষ নজরদারির কথা জানানো হয় শিল্পাঞ্চল পুলিশের পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুনঃ দেশব্যাপী বিউটি পার্লারগুলোকে সহায়তার আহ্বান জানালো উইমেন চেম্বার
ওই সভায় এপ্রিলের বেতন ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কবে নাগাদ এপ্রিলের বেতন পরিশোধ হবে, তা মালিকদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। মালিকপক্ষ সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ না জানালেও ঈদের আগে বেতন পরিশোধ হবে বলে জানিয়েছেন। এছাড়া শ্রমিকদের ঈদ বোনাস অর্ধেক ঈদের আগে এবং বাদবাকি অংশ ঈদের পরে পরিশোধ হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শ্রমিক নেতা ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের মহাসচিব বাবুল আখতার ইত্তেফাককে বলেন, বড়ো কারখানার সঙ্গে ব্যাংকের লেনদেন ভালো হওয়ায় তারা ব্যাংকের কাছ থেকে প্রণোদনার ঋণ-সুবিধা পাচ্ছে। ওইসব কারখানায় বেতনভাতাও ঠিকমতো হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হবে মাঝারি ও ছোটো কারখানা নিয়ে। এসব কারখানা ব্যাংকের কাছ থেকে প্রণোদনার ঋণ পাচ্ছে না। ফলে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধেও সমস্যা হবে। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়টি আজকের (শনিবার) সভায় মাননীয় মন্ত্রীকে জানিয়েছি।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী ইত্তেফাককে বলেন, স্যালারি শিট ব্যাংকে পাঠানো এবং পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার কারণে কিছু সময় লাগছে। তবে আগামী ২২ এপ্রিলের মধ্যে বেতন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া বোনাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ঈদের আগে অর্ধেক বোনাসের অর্থ দেওয়া হবে। বাদবাকি অংশ পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশসূত্র জানিয়েছে, গতকাল নাগাদ বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৮৮২টি কারখানার মধ্যে ১ হাজার ১৪২টি কারখানায় বেতন হয়নি। অন্যদিকে ১ হাজার ১০১টি কারখানার মধ্যে ৭৯১টি কারখানায় বেতন হয়নি। এর বাইরে অন্যান্য খাতের শিল্পে বেতন পরিশোধের অবস্থা অরো নাজুক।