শোক থেকে শক্তি। পেশাদারিত্বের বুলি আওড়ান যারা, তাদের জন্য আদর্শ দৃষ্টান্ত হতে পারেন আকবর আলী। তরুণ এই ক্রিকেটার বাংলাদেশকে প্রথম বিশ্বকাপ জিতিয়ে ইতিহাস গড়েছেন। তবে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়কের সাথে ঘটে গেছে এমন কিছু, যা মেনে নেওয়া যে কারও জন্য কঠিন। বোনের মৃত্যুশোক আড়াল করে দেশকে জেতালেন বিশ্বকাপ!
২২ জানুয়ারি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান আকবরের একমাত্র বড় বোন। প্রিয়জন হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করেই ১৯ দিনের মাথায় আকবর দেশকে দিলেন বিশ্বজয়ের নেতৃত্ব।
ভাই ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে মাঠে গেলেই জায়নামাজে বসে থাকতেন বড় বোন। দুই হাত তুলে দোয়া করতেন ছোট ভাইয়ের জন্য। ভাই যেন ভালো খেলে সুস্থ শরীর আর জয় নিয়ে ফিরতে পারে ঘরে। বোনের সেই আদরের ছোট ভাই আকবর আলী গতকাল বিশ্বজয় করেছেন। কিন্তু তা তো দেখতে পারলেন না সেই বোন খাদিজা খাতুন।
খবরটা প্রথমে তাঁর কাছ থেকে চেপেই রাখা হয়েছিল। কিন্তু যেভাবেই হোক আকবর তা জেনে যান। ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ার পরপরই আকবর ফোন দিয়েছিলেন তাঁর মেজ ভাইকে। বলেছিলেন, ‘আপার মৃত্যু সংবাদটা কেন আমার কাছে চেপে গেলেন আপনারা?’ওই মুহূর্তের কথা জানানোর সময় হুহু করে কাঁদলেন আকবরের বাবা মোহাম্মদ মোস্তফা।
এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। সেমিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে স্বপ্নের ফাইনাল। পুরো সময়টাতেই বোনের মৃত্যুর শোক বুকে নিয়েই খেলেছেন আকবর। তাঁর বোনের মৃত্যু সংবাদ ছুঁয়ে গিয়েছিল গোটা দলকেই।
রংপুরে আকবরের বাড়ির মানুষের অনুভূতি আজ মিশ্র। বাড়ির ছেলের এমন অনন্য কীর্তির মধ্যেও সবার মনে একটাই চিন্তা—আকবর ফিরলে কী জবাব দেবেন তাঁরা। তাঁর বাবা বললেন, ‘পাকিস্তান ম্যাচের একদিন আগে আমাদের একমাত্র মেয়ে মারা যায়। চার ভাইয়ের একটাই বোন। আকবর বাড়ির সবার ছোট হওয়াতে ও ছিল ওর বোনের কলিজার টুকরা। মৃত্যু সংবাদটা ওকে দিতে চাইনি। কিন্তু কীভাবে যেন পেয়ে যায়। আগে কিছু বলেনি। পাকিস্তান ম্যাচের পর ওর মেজো ভাইয়ের কাছে খবর না জানানোর কৈফিয়ত চাইলে আমরাও কিছুটা ঘাবড়ে যাই। আমি তো ওর সঙ্গে কথা বলার সাহসই পাইনি। কী জবাব দেব ?’
কাল শোককেই শক্তিতে পরিণত করেছিলেন আকবর। শোক ভুলেই অপার মানসিক শক্তিতে বলীয়ান হয়েছিলেন। হিম শীতল মনঃসংযোগে বিপদের মধ্যেও ছিলেন অবিচল। বীরের মতো দিয়েছেন নেতৃত্ব। পুরো সময়টাতে কোনো এক দূর লোক থেকে আকবরকে নিশ্চয়ই সঙ্গ দিয়ে গেছেন তাঁর বোন।