বাংলা, উর্দু, হিন্দি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, বালুচ, ফারসি, আরবি, স্প্যানিশ, ফরাসি ও ইংরেজি, এমন আরও অনেক ভাষার গান গেয়ে বিশ্ব মাতিয়ে রাখা একমাত্র বাংলাদেশি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। টানা পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে যিনি মাতিয়ে রেখেছেন সংগীত পিপাসুদের।আজ (১৭ নভেম্বর) এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গায়িকার ৬৮তম জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে সিলেটে তার জন্ম।
শৈশবে রুনা লায়লার শুরুটা হয়েছিল নাচ দিয়ে। পাকিস্তানের করাচীতে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসে চার বছর নাচ শেখেন তিনি। মা আমিনা লায়লা মেয়েকে নাচ শেখানোর জন্য এখানে ভর্তি করেন।
করাচীর একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন বাবা এমদাদ আলী। তবে নাচ ভুলে অজান্তেই গানের ভুবনে ঢুকে পড়েন। বড় বোন দিনা লায়লা গান শিখতেন। বাসায় তাকে গান শেখাতে আসতেন একজন ওস্তাদ। বোন যখন গান করতেন, তার আশপাশেই থাকতেন রুনা। ওস্তাদজি বোনকে যা শেখাতেন, তা তিনি শুনে শুনেই শিখে নিতেন। পরে গুনগুন করে গাইতেন। মেয়ের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন বাবা-মা। পরে মেয়েকে গান শেখানো শুরু করেন।
এরপর একদিন হঠাৎ করেই সুযোগ আসে মঞ্চে গাইবার। করাচীতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা ওল্ড বয়েজ অ্যাসোসিয়েশন। এখানে গান করার কথা ছিল রুনার বড় বোন দিনা লায়লার। কিন্তু অনুষ্ঠানের আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন দিনা। শেষে বড় বোনের জায়গায় তার গান গাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেদিন ধুমধাম গেয়ে মাত করেছিলেন। সবাই মুগ্ধও হয়েছিলেন।
মাত্র সাড়ে ১১ বছর বয়সে শুরু হয় সিনেমার প্লেব্যাকে গাইবার। সিনেমার নাম ছিল ‘জুগনু’। উর্দু ছবি। পুরো এক মাস চর্চা করেন। ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন মনজুর হোসেন যিনি তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। ১৯৬৫ সালের জুন মাসে ‘জুগনু’ ছবিতে প্রথম তার গান গাওয়া। দ্বিতীয় গানটিও একই ছবির।
এরপর রুনা লায়লা প্রথম বাংলা গান রেকর্ডিং করেন পাকিস্তান রেডিওর ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে। পরে ষাটের দশকে বাংলা ছবিতে গান করার জন্য আমন্ত্রণ পান রুনা। চিত্রপরিচালক নজরুল ইসলাম আর সংগীত পরিচালক সুবল দাস ‘স্বরলিপি’ ছবির গান রেকর্ডিং করতে যান লাহোরে। তারা ছবির একটি গান রুনাকে দিয়ে গাওয়ানোর পরিকল্পনা করেন। তখন তিনি দারুণ ব্যস্ত। তবে শুনে রাজি হয়ে যান। লাহোরের বারী স্টুডিওতে রেকর্ডিং করা হয় গানটি। গানটির শিরোনাম ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’। একই গানে আরও কণ্ঠ দিয়েছিলেন মাহমুদুন নবী। তারপর একজন রুনা লায়লা শুধুই কিংবদন্তি হয়ে ওঠার গল্প শুরু।
সুরকার নিসার বাজমির ১০টি করে তিন দিনে মোট ৩০টি গান রেকর্ডের পর রুনা লায়লা নাম লেখান গিনেস বুকে। ১৮টি ভাষায় গান গাওয়া, নিজের সংগীতজীবন নিয়ে নির্মিত ‘শিল্পী’ ছবিতে অভিনয় করা- এসব মিলিয়ে রুনা লায়লা হয়ে ওঠেন উপমহাদেশের অন্যতম সংগীত কিংবদন্তি হিসেবে।
এদিকে এবারের জন্মদিনকে ঘিরে ধ্রুব মিউজিক স্টেশন উদ্যোগ নিয়েছে তারই সুরে চারটি গান প্রকাশের। মজার বিষয় হলো, এর মধ্যে দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনার দুই মেয়ে আঁখি আলমগীর (আলমগীরের সন্তান) ও তানি লায়লা। বাকি দুজন হলেন জিনিয়া জাফরিন লুইপা ও হৈমন্তী রক্ষিত।
গানগুলোর কথা লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও কবির বকুল। এগুলোর সংগীতায়োজনে আছেন রাজা কাশেফ। এরমধ্যে লুইপার গাওয়া ‘এই দেখা শেষ দেখা’ গানটি প্রকাশ হয়েছে গতকাল সোমবার রাতে।
এই প্রকাশনা প্রসঙ্গে রুনা লায়লা বলেন, ‘আমি খুবই খুশি যে এবারের জন্মদিনকে ঘিরে আমার সুরে চারটি গান রিলিজ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো, এই চারটি গানই গাইলো এ প্রজন্মের শিল্পীরা। এই আয়োজনের সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন সবাইকে ধন্যবাদ।’
জানান, করোনাকাল বলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরেই কাটাবেন এবারের জন্মদিন।