নিউজ স্বাধীন বাংলা: নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি কান্দাপাড়া মাদ্রাসা রোড এলাকার অক্সফোর্ড হাই স্কুলের ২০ এর অধিক ছাত্রীকে ৪ বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম সরকার ওরফে আশরাফুল ও প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকারের ফাঁসি ও স্কুলটি বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন করেছে ওই এলাকার ১৪টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৩০ জুন) সকাল ১০টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় মানববন্ধনে ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীরা অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধটি এসময় মৌচাক বাসস্ট্যান্ড থেকে সানাড়পাড় বাসস্ট্যান্ড হয়ে এক কিলোমিটার রাস্তা ছাড়িয়ে যায়। শিক্ষকদের ফাঁসির দাবিতে আয়োজিত এই মানববন্ধনে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীদের সাথে শতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদরা।
সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাশ্চমপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, সানারপাড় আনন্দলোক উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী আব্দুস সামাদ মাদ্রাসা, এন আলম মেরিট কেয়ার স্কুল, গ্রীন বাংলা মডেল হাইস্কুল, মৌচাক আইডিয়াল স্কুল, প্রত্যাশা মডেল স্কুল, কুসুমকলি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, কান্দাপাড়া পাবলিক স্কুল, হলি চাইল্ড কিন্ডারগার্টেন স্কুল, নলেজ আইডিয়াল স্কুল, ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আনন্দলোক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসময় মিজমিজি কান্দাপাড়া, সানারপাড়, পশ্চিমপাড়া, এলাকাবাসীও যোগদেয় এ মানববন্ধনে।
মানববন্ধনে এসময় উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, নাসিক ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ভূইয়া রাজু, মিজমিজি পশ্চিম পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান, এন আলম মেরিট কেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম, আনন্দলোক উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুর রহীম মেম্বার, যুবলীগ নেতা হাজী মোঃ সুমন কাজী, যুবলীগ নেতা মাজেদুল ইসলাম মনিরসহ স্থানীয় আরো অনেকে।
মানববন্ধনে বক্তারা প্রথমে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান এবং সেই সাথে তাদেরকে বিচার পক্রিয়ার মাধ্যমে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি করেন। পাশাপাশি অক্সফোর্ড হাই স্কুলটিকে বন্ধেরও দাবি জানান।
তারা আরো বলেন, ভবিষ্যতে আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য দোষিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এসময় মানববন্ধনে এসে উপস্থিত হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিঃ পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শাহীন শাহ পারভেজসহ অন্যরা।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে অতিঃ পুলিশ সুপার মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে আটক করেছি। ইতোমধ্যে তাদের দুজনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বিস্তারিত তথ্যের জন্য। তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। তাছাড়াও যদি আরো কোন বø্যাকমেইলিংয়ের শীকার শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা মামলা করতে চায় আমরা তাদের মামলা নিবো।
এর আগে ২৮ জুন সহকারি শিক্ষক আরিফুল ইসলাম সরকার ওরফে আশরাফুল ও মদদদাতা প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকারের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত শিক্ষক আরিফের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন স্কুলের নির্যাতিত এক ছাত্রীর বাবা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপর মামলাটি দায়ের করেন র্যা ব-১১ এর ডিএডি আব্দুল আজিজ ।
উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক আরিফুল ইসলাম সরকার ওরফে আশরাফুল আপত্তিকর ছবি তুলে ২০ এর অধিক ছাত্রীকে বøাকমেইল করে ৪ বছরের অধিক সময় ধরে ধর্ষণ করে আসছিল। এ কাজে সহায়তা করেন একই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকার। এ অভিযোগে এলাকাবাসী ওই শিক্ষককে আটক করে গণধোলাই দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) দুপুরে র্যা ব-১১ ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে সহকারি শিক্ষক আরিফুল ইসলাম সরকার ওরফে আশরাফুল ও প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে গ্রেফতারকৃত দুই শিক্ষক ২টি মামলায় পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে।