খুলনায় দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়েও আধুনিক জেলা কারাগার নির্মাণের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ, কারাগার অভ্যন্তরে নির্মাণাধীন চারতলা হাসপাতালটি পাঁচ তলাকরণসহ প্রকল্পে নতুন নতুন বিষয় সংযুক্ত হওয়ার কারণে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগছে।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯১২ সালে খুলনা মহানগরীর ভৈরব নদের তীরে স্থাপন করা হয় খুলনা জেলা কারাগার। ৬০৮ জন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন কারাগারটিতে বর্তমানে দুই থেকে তিন গুণ বন্দি রয়েছে। ‘অমানবিক বন্দিদশা’ ও সময়ের চাহিদা বিবেচনায় বিভাগীয় শহর খুলনায় নতুন একটি আধুনিক কারাগার স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ‘কারাগার হবে সংশোধনাগার’ এমন উদ্দেশ্য সামনে রেখে ২০০৮ সালের ২০ জুলাই খুলনায় আধুনিক কারাগার নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। নগরীর কোলঘেঁষা ডুমুরিয়া উপজেলার চক মথুরাবাদের হাসানখালী মৌজার ৩০ একর জমিতে নতুন এ কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১১ সালে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন লাভ করে। এরপর স্থান পরিবর্তন, জমি অধিগ্রহণসহ সব প্রক্রিয়া শেষে ৫৬ একর জমির ওপর ২৫১ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ হাজার বন্দির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এ কারাগারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ঐ সময় প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ, কারাগার অভ্যন্তরে নির্মাণাধীন চারতলা হাসপাতালটি পাঁচ তলাকরণ, কারারক্ষীদের বাসভবন সম্প্রসারণ, দর্শনার্থীদের স্থান ও ভবনের বর্ধিতকরণসহ বেশকিছু নতুন প্রস্তাব প্রকল্পে সংযুক্ত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় আরো ছয় মাস মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মাত্র ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, খুলনার নতুন এ কারাগার গড়ে তোলা হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে নির্মাণ করা হবে ছোট-বড় ৫২টি ভবন। কারাগারে শিশুদের জন্য থাকবে আলাদা ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। শিশুসহ মা বন্দিদের জন্যও থাকবে আলাদা একটি ওয়ার্ড। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা ওয়ার্কশেড ও বিনোদনকেন্দ্র থাকবে।
গণপূর্ত বিভাগ খুলনা-২-এর সহকারী প্রকৌশলী মো. জিয়া বলেন, সর্বশেষ সময় বেড়ে এ প্রকল্পের শেষ সময় হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বর। তবে, প্রকল্পে নতুন নতুন বিষয় সংযুক্তি হওয়ার কারণে কাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগছে। গণপূর্ত বিভাগ খুলনা-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দীন বলেন, নতুন কিছু প্রস্তাব ও জমি অধিগ্রহণের জন্য নতুন জেলা কারাগার নির্মাণ শেষ করতে সময় লাগছে। মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই বছর পর নতুন এ কারাগারের নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।