কী আনন্দ আকাশে, বাতাসে…!
বুধবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২১। দিনটি ছিল আলোকোজ্জ্বল। আকাশে ছিল ঝলমলে রোদ। আবহাওয়া ছিল আরামদায়ক। মায়া, মমতা আর গাঢ় ভালোবাসায় মাখামাখি হয়ে উঠেছিল দিন। বাতাসে ছিল আশ্বাস। মানুষের কণ্ঠে ছিল নতুনদিনের আগমনি গান।
আজকের দিনটি ছিল খুব খুবই বিশেষ একটি দিন। আমেরিকানদের জন্য, সারা বিশ্বের জন্য, আমার নিজের জন্য।
আজকের দিনটি আমার জীবনের কয়েকজন প্রিয় মানুষদের জন্য স্মরনীয়, বরনীয়। আজকে ছিল আমার প্রিয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেনের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্যাপিটল হিলে অভিষেকের দিন। আজ ছিল আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম নারী, প্রথম আমেরিকান-আফ্রিকান, প্রথম আমেরিকান-এশিয়ান একজন মানুষের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহনের দিন। আজ ছিল আমার মা সাজেদা জামান বিরু’র ৮০ তম শুভ জন্মদিন।
আজ একজন ৭৮ বছরের তরুন বিপুল উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার ইন চীফের দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম একজন নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলেন। বাংলাদেশের বিক্রমপুরের এক সাধারণ নারী নিউ ইয়র্কে বসে, করোনা জয় করে, তাঁর ৮০ তম জন্মদিন পালন করলেন। একই দিনে।
এই সবগুলো ঘটনার সাথেই আমি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। কারন আমারই ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন আমাদের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভিপি কমালা হ্যারিস। এবং আমি সাজেদা জামান বিরু’র আত্মজা!
আজকের দিনটি শুরু হয়েছিল অজস্র আনন্দ, উদ্দীপনা, ইচ্ছে-পূরন দিয়ে। একজন বিতর্কিত, অপ্রিয়, অমানুষ, অযোগ্য, ক্ষমতালিপ্সু প্রেসিডেন্টের অপসারনের আনন্দ ছিল আকাশছোঁয়া।। ওয়াশিংটন ডিসি, নিউ ইয়র্ক আর ট্রাম্পের বিষাক্ত নি:শ্বাসে কলুষিত হবে না, একজন স্বার্থপর মানুষ আর আমাদের অক্সিজেনে ভাগ বসাতে পারবে না, এই স্বস্তিবোধ ছিল অপার!
ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর আমরা প্রাতরাশ আর গরম কফি নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসেছিলাম। আমার মা’কে জড়িয়ে ধরে ‘হ্যাপি বার্থডে’ বলে উইশ করেছি। দিনভর চোখ ছিল টিভির পর্দায়। মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য ফাঁকে ফাঁকে রান্না করেছি। চটপট শাওয়ার নিয়েছি।
সাবেক প্রেসিডন্ট জর্জবুশ, বিল ক্লিনটন এবং বারেক ওবামার উপস্থিতি দেখে ভাল লেগেছে। ভাল লেগেছে সাবেক ফাস্ট লেডি লরা বুশ, হিলারি ক্লিনটন এবং মিশেল ওবামার ফ্যাশনেবল উপস্থিতি।
কমালা হ্যারিস ডাগ দম্পতির পরিবারের পোশাক ছিল ফ্যাশনেবল, উপস্থিতি ছিল উজ্জ্বল। ফাস্টলেডি জিল, জো বাইডেনের পোশাক অভিজাত এবং ফ্যাশনেবল। বাইডেনের ১৬ বছরের তারুন্যদীপ্ত নাতনি সবার নজর কেড়েছেন।
রাতে যখন মায়াবি আলোতে, আলোক সজ্জায়, আতশবাজিতে উৎসব মূখরিত হয়ে উঠেছে হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল হিল, মনুমেন্ট প্রাঙ্গন তখন আমরাও আনন্দিত হয়ে উঠেছি। আমরা পরিবারের সব সদস্যরা একত্রিত হয়ে কেক কেটে, মোমবাতি জ্বেলে, উইশ করে বিরু’র জন্মদিন পালন করেছি!
আনন্দিত হয়েছি আমেরিকার জন্য। আনন্দিত হয়েছি আমার প্রেসিডেন্ট, আমার ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আমার মায়ের জন্য।
গড ব্লেস আমেরিকা, গড ব্লেস আওয়ার প্রেসিডেন্ট, গড ব্লেস আওয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট এন্ড গড ব্লেস মাই মাদার!!!